কুটির শিল্প প্রধানত পরিবারভিত্তিক। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝরি শিল্পে পরিবারের সদস্যগণ ছাড়াও বাইরের শ্রমশক্তির প্রয়োজন হয়। এ জাতীয় শিল্পের উদ্যোক্তাগণ নিজের শ্রম ও মেধা খাটিয়ে এবং স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তবে এ শিল্পের বিকাশে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সেগুলো হলো-
১. কাঁচামালের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ : সাধারণত যে জাতীয় কাঁচামাল যেখানে বেশি সেখানেই এ জাতীয় শিল্পগুলো বেশি গড়ে উঠে। তবে অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যোগাযোগ অব্যবস্থাসহ অন্যান্য কারণে কাঁচামাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন ।
২. বাজারের নৈকট্য : উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় ও বিপণনের জন্য প্রয়োজন বাজারের। আবার কাঁচামাল ক্রয়ের বাজারও কাছাকাছি থাকা উচিত। কাঁচামাল ক্রয় ও উৎপাদিত সামগ্রীর বাজার নিশ্চিত করা গেলে এ জাতীয় শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
৩. শ্রমিকের পর্যাপ্ত যোগান : ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প মূলত শ্রমঘন শিল্প। এদের বিকাশে দক্ষ জনশক্তি ও স্বল্প মজুরিতে শ্রমিকের প্রাপ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। কুটির শিল্পের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ডিজাইন ও দক্ষ কারিগরি জ্ঞান অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের দক্ষ করার সুযোগ থাকতে হবে।
৪. পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা : প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় কাঁচামাল ও বাজারের উপর নির্ভর করে শিল্প প্রতিষ্ঠা হলেও পণ্যের বাজার বিস্তৃত হলে তার বিক্রয় ও বিপণনের জন্য এবং কাঁচামাল যন্ত্রপাতি সুষ্ঠুভাবে আনা-নেয়ার জন্য যোগাযোগের সুব্যবস্থা আবশ্যক।
৫. স্থানীয় ও বৈদেশিক চাহিদার উপর গুরুত্বারোপ : যেহেতু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থানীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে, তাই স্থানীয় চাহিদা পূরণের গুরুত্ব দিয়ে শিল্প স্থাপিত হয়। তবে শুধুমাত্র স্থানীয় চাহিদার দিকে লক্ষ রাখলেই হয় না। বৈদেশিক বাজারের প্রসার ও একই সঙ্গে চাহিদা পূরণের দিকেও গুরুত্ব দিতে হয়।
৬. পুঁজির সহজলভ্যতা : ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য স্বল্প পুঁজির প্রয়োজন হলেও সকল সময় উদ্যোক্তার পক্ষে পুঁজির যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ব্যাংকসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ ঋণ হিসেবে পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে ।
৭. সরকারি সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা : কুটির শিল্প দেশের ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক। তাই এ বিকাশ ও প্রকাশের জন্য সরকারি সকল ধরনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। আশার কথা যে, সরকার ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। সরকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়তাদান, তাঁতশিল্প রক্ষা, বেনারসি ও জামদানি পল্লীর মতো রেশম পল্লী গড়ে তোলাসহ তাঁতি, কামার, কুমার, মৃৎশিল্প, বাঁশ, বেত, তামা, কাঁসা ও পাটি শিল্পে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।